বিছানার ভেলায় চড়ে বাজার-সদাই কিনছেন শারজাহবাসী!

আরব আমিরাত
  © সংগৃহীত

মরুর দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটিতে ৭৫ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড গড়ে দুবাই-শারজাহ-আবুধাবি এখন বানভাসিদের শহর। তবে এর মাঝেও থেমে নেই জনজীবন। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটায় ঘর থেকে বের হতে শহরের বাসিন্দারা নিজেরাই তৈরি করছেন বিচিত্র সব ভেলা।

ভেলা তৈরির কাজে কেউ ব্যবহার করছেন কর্কশিট অথবা কাঠ; কেউ আবার ঘরের ম্যাট্রেস নিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছেন! ভেলার বৈঠায়ও আছে বৈচিত্র্য। এই কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে মব বা ঘর ঝাট দেওয়া বড় ব্রাশ।  

মূলত বাজার সদাই করার কাজে ব্যবহার করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসী উপমহাদেশীয়রাই এই ভেলা গুলো তৈরি করেছেন। যাওয়া আসার পথে অনেকেই এই ভেলার মাঝিদের কাছে বানের পানিতে ডুবে থাকা রাস্তা পারাপারে সাহায্য চাইছেন।

শারজাহর আল মাজাজ আবাসিক এলাকায় এই ধরনের বেশকিছু ভেলা দেখা যায়, যারা মুদি দোকান থেকে সদাই কিনছিল।  

এরকমই একটি ভেলা চালাচ্ছিলেন ৩৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইসমাইল। ভেলায় এক জন যাত্রী নেন তিনি। ইসমাইল জানান, তিনি যাত্রীদের কাছে কোনো টাকা দাবি করেন না যাত্রীরা যা দেন তাতেই তিনি খুশি।    

ওমর নামে আরেকজন জানান,তিনি ইতোমধ্য তিন জনকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন এবং আরও বেশ কিছু কল পেয়েছেন যারা বাড়ির গেইটে তার জন্য অপেক্ষা করছিল কিন্তু তার ভেলায় এক সঙ্গে দুই জনের বেশি লোক নেওয়া যায় না।

আরব আমিরাতের উপকূলীয় শহরগুলো সচরাচর রুক্ষ এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানে সারা বছরে গড়ে ১০০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত হয়। তবে এবার স্মরণকালের রেকর্ড বৃষ্টিপাতে নজিরবিহীন বন্যা দেখা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত জুড়ে।  

২৪ ঘণ্টার অস্বাভাবিক বৃষ্টিতে এমন রেকর্ড বন্যার পর কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি নামানো নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লেও কর্তৃপক্ষ এই দাবি নাকচ করে দিয়েছে।

তবে আরব আমিরাতের এই হঠাৎ বন্যার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলতি সপ্তাহে যে ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে, এর মূল কারণ ক্লাউড সিডিং। পানির নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য ২০০২ সাল থেকে অর্থাৎ গত প্রায় ২২ বছর ধরে এই ক্লাউড সিডিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে দেশটির সরকার।

পরিবেশবিদদের মতে, ক্লাউড সিডিং পরিবেশের জন্য ভাল নয়। এর নানান ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। যেসব এলাকায় ক্লাউড সিডিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, সেখানে সাধারণত অতিরিক্ত বৃষ্টির জন্য পরিকাঠামো থাকে না। ফলে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবহাওয়া বিভাগ ন্যাশনাল সেন্টার অফ মেটিওরোলজি বৃষ্টি নামানোর লক্ষ্যে গত সোমবার ও মঙ্গলবার আল আইন বিমানবন্দর থেকে ক্লাউড সিডিং বিমান প্রেরণ করে। এর ফলে এই দুইদিন সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়।
 
সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতিবেশী দেশ ওমানেও প্রবল বর্ষণ হয়েছে।  যার ফলে দেশটিতে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি, খালিজ টাইমস, আল জাজিরা


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ