তীব্র গরমে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে ছন্দপতন

গরমে
  © সংগৃহীত

তীব্র গরমে ছন্দপতন ঘটেছে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। জীবিকার তাগিদে প্রতিকূল পরিবেশ উপেক্ষা করেও তারা ঘর থেকে বাইরে বেরোচ্ছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘসময় কাজ করতে না পারায় ও রাস্তায় মানুষের আনাগোনা কম থাকায় ভাটা পড়েছে তাদের আয়ে। 

মেহেরপুর জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপ প্রবাহ। দিন ও রাতের তাপমাত্রায় খুব বেশি পার্থক্য না থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে শ্রমজীবী মানুষের আয় রোজগারেও। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল থেকে শুরু হয়েছে রোদের তেজ। বেলা বাড়ার সঙ্গেসঙ্গে রোদ আর গরমের তীব্রতা বাড়ছে। গরম সহ্য করতে না পেরে গাছের ছায়ায় বসে শীতল হওয়ার চেষ্টা করছেন ভ্যান ও ইজিবাইক চালকরা। আবার গরমের ক্লান্তি নিয়ে ইজিবাইকেই ঘুমিয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। দিনের সর্বোচ্চ সময়টুকু ইজিবাইক চালাতে না পারায় আয় রোজগার কমে যাচ্ছে এসব খেটে খাওয়া মানুষের।

এদিকে তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে ঘর থেকে বেরও হলেও স্বস্তি নেই কর্মজীবী মানুষের। চলার পথে ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেওয়া আর সরবত পান করে শীতল হওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।

তীব্র গরমে মেহেরপুরের হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষ বেশি অসুস্থ হচ্ছেন। পেটের পীড়া, ঠান্ডা জ্বর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়া নিউমোনিয়া পানি শূন্যতা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, বাড়ছে হিট স্ট্রোকের রোগী। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। এখন তা অতি তীব্র তাপদাহে রূপ নিয়েছে। বুধবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।

এদিকে ফেনী শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সূর্যের প্রচণ্ড তাপে নাজেহাল অবস্থায়ও রিকশাচালক, পথচারী, হকার ও ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ খেটে খাওয়া মানুষেরা বাইরে আছেন। রোদ থেকে বাঁচতে মাথায় গামছা, মাথাল ব্যবহার করছেন তারা। আবার গরমে হাঁপিয়ে ওঠা অনেকে ক্লান্তি দূর করতে সড়কের পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে শরবতে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন।

ফেনী শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে বুলু মিয়া নামে এক রিকশাচালক বলেন, গরমে ঠিকমতো রিকশা চালানো যায় না। আবার রাস্তায় যাত্রীও অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম। গত কয়েকদিন মালিকের জমা টাকা দিতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

হারুন নামে আরেক রিকশাচালক বলেন, সকালে কিছু সময় রিকশা চালিয়ে বিকেলের আগে আর বের হতে পারি না। এতো গরমে ঘরেও শান্তি নেই। সারাদিনে অল্প কিছুক্ষণের জন্য ঘরে ফিরলেও লোডশেডিং। আয়–রোজগার কমে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি।

ফেনী শহরের ট্রাংক রোড জিরো পয়েন্টে কথা হয় ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী বয়োবৃদ্ধ রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে এরকম গরম দেখিনি। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হয়েছি। কতক্ষণ হাঁটার পরপরই বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। গরমে দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় কমে গেছে।

শহরের রাজনন্দিনী দীঘির পাড়ে জুতা সেলাইয়ের কাজ করছিলেন আবুল খায়ের। তিনি বলেন, গরমে আয় একবারে কমে গেছে। আগে দৈনিক ৪০০–৭০০ টাকা আয় হতো। গত কয়েকদিন তার অর্ধেকও আয় হয় না। খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি। তারপরও সংসার তো আর গরম বুঝবে না। তাই নিরুপায় হয়ে এতো গরমে বসে আছি।

চলমান দাবদাহ আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানান আবহাওয়া অফিস। ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চমান পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগে নিম্ন থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে। চলমান তাপপ্রবাহ আরও কিছুদিন পর্যন্ত স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


মন্তব্য