দিনে হিটস্ট্রোকের ভয়, চাঁদের আলোয় ধান কাটছে কৃষকরা

ধান
  © সংগৃহীত

মাঠ জুড়ে উঁকি দিচ্ছে সোনালী ধান। অধিকাংশ জমির ধান এখন পেঁকে গেছে। কিন্তু তীব্র দাবদাহের কারণে বেশি টাকা দিয়েও মিলছে না ধান কাটার মজুর। তাই বাধ্য নিজেদের ক্ষেতের ধান নিজেরাই কাটছেন চাষীরা। তবে দিনের বেলা সূর্যের প্রখর তাপ থাকায় ধান কাটছেন রাতে, চাঁদের আলোতে! কৃষি বিভাগ বলছে, হিটস্ট্রোক এড়াতেই অবলম্বন করা হচ্ছে এমন পন্থা।

সরেজমিন দেখা মেলে, জেলার চর কাশাভোগ এলাকার মিজান শিকদার, ৮০ শতাংশ জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। ধানের ফলন ভালো হওয়ায় অনেকটাই খুশি তিনি। তবে বিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে ধান পাকার পর। প্রচণ্ড দাবদাহে দিনের বেলা ধান কাটতে রাজি হচ্ছিলো না কৃষাণরা। পরে সিদ্ধান্ত নেন রাতেই কাটা হবে জমির ধান। এরপর ৪ জন কৃষাণ নিয়ে চাঁদের আলোকে সঙ্গী করে ধান কাটতে শুরু করেন। রাত ৯টা থেকে শুরু করে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে তাদের এ ধান কাটার কার্যক্রম। এতে অনেকটাই স্বস্তি মিলেছে তার।

অতিরিক্ত গরমে দিনে হিটস্ট্রোকের ভয়ে শরীয়তপুরের ধানচাষিরাও চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন। শরীয়তপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ছয় উপজেলায় ২৫ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৫৮৫ হেক্টর, নড়িয়া উপজেলায় ৫ হাজার ৪২০ হেক্টর, জাজিরা উপজেলায় ১ হাজার ১৫১ হেক্টর, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর, ডামুড্যা উপজেলায় ৩ হাজার ৮২১ হেক্টর ও গোসাইরহাট উপজেলায় ৪ হাজার ৮৯৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। গত বছর জেলায় আবাদ করা হয়েছিল ২৫ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৯০৬ টন। গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন বেড়েছে ৩৩৬ হেক্টর জমিতে।

চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬২৭ টন। তবে একটানা চলা প্রচণ্ড দাবদাহে ধানের উৎপাদনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটবে বলে ধারণা করছে কৃষিবিভাগ।

আঙ্গারিয়া এলাকার ধানচাষি আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি রাতে কৃষাণ নিয়ে ৪০ শতাংশ জমির ধান কাটার কাজ শুরু করেছি। মূলত দিনে হিটস্ট্রোকের ভয়ে অনেকেই ধান কেটে দিতে রাজি হননি। পরে রাতে ধান কাটা শুরু করি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, প্রচণ্ড দাবদাহে আমাদের কৃষকদের দিনে ধান কাটা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, অতিরিক্ত গরমে কাজ করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের জেলার বিভিন্ন জায়গায় রাতে ধান কাটা হচ্ছে। এতে হিটস্ট্রোক এড়ানো সম্ভব হচ্ছে।


মন্তব্য