হাওরে আঁকা হলো ‘বিশ্বের দীর্ঘতম’ আলপনা

হাওর
  © সংগৃহিত

রঙ-তুলি হাতে একদল শিল্পীর ছোটাছুটি। এদের কেউ একমনে তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে তুলছে সড়ক, কেউবা দিচ্ছে নির্দেশনা, কেউ এনে দিচ্ছে রঙের কৌটা। দেখতে দেখতে সড়কটি ঢেকে যাচ্ছে আলপনায়। আর তা দেখতে ভিড় জমিয়েছে হাওরের মানুষ।

এবারের বর্ষবরণে দেশজুড়ে বৈশাখের মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিতে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থেকে অষ্টগ্রাম পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অলওয়েদার সড়কে বাঙালি ঐতিহ্যের এ আলপনা আঁকা হচ্ছে।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় নাট্য ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর আল্পনা আঁকার কাজের উদ্বোধন করেন। দেশের ৬৫০ জন চারুকলা শিক্ষার্থী এ আলপনা আঁকার কাজ করছেন। 

শনিবার (১৩ এপ্রিল) সারারাতে সেটি শেষ করা হবে।  রবিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সেখানে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আলপনা আঁকা সড়কটি জনগণের জন্য খুলে দেবেন।

আয়োজকেরা জানিয়েছেন, এটি হতে যাচ্ছে বর্ষবরণ উৎসবে বিশ্বের দীর্ঘতম আলপনা।

উৎসবের রঙে হোক বাংলামি এই স্লোগানে আলপনায় বৈশাখ ১৪৩১ নামে এটির যৌথ আয়োজন করেছে এশিয়াটিক এক্সপেরিয়েনশিয়াল মার্কেটিং লিমিটেড, বাংলালিংক কমিউনিকেশনস লিমিটেড ও বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড।

আলপনা আয়োজন সম্পর্কে এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটির চেয়ারম্যান নাট্য ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এ আয়োজনটি তাদের অষ্টম সংস্করণ। কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারীর কারণে গত কয়েক বছর আলপনা উৎসব বন্ধ ছিল। এবার কিশোরগঞ্জসহ ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও খুলনার শিববাড়ি মোড়ে একযোগে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। তবে কিশোরগঞ্জের আলপনাটি সবচেয়ে দীর্ঘতম। এটি আঁকা হচ্ছে মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত। আমাদের চেষ্টা থাকবে এটি যেন গিনেসবুকে স্থান পায়।

শনিবার বেলা দেড়টার দিকে মিঠামইনের অলওয়েদার সড়কে গিয়ে দেখা যায়, তুলি দিয়ে সেখানে বিভিন্ন রঙের ছোপ দেয়া হচ্ছে। সড়কে শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ আলপনা দেখতে ভিড় করেছে। তাদের মধ্যে উৎসব উৎসব ভাব। ভর দুপুরে প্রচণ্ড রোদেও সেখানে সেলফি তুলছে অনেকে।

আলপনা আঁকা দেখতে এসেছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলাম। দুপুরের রোদে ঘেমে একাকার হয়ে গেলেও সেদিকে খেয়াল নেই তার। আলপনার ওপর নানা ভঙ্গিতে সেলফি তুলতেই ব্যস্ত।

তিনি বললেন, ‘হাওর এমনিতেই সুন্দর। হাওরের অলওয়েদার সড়ক আরো সুন্দর। এই সড়কের আলপনা হাওরের রূপকে যেন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।’

মায়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আলপনা আঁকা দেখছিল মিঠামইনের অফিস পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসফিয়া জান্নাত (৭)। একঝটকায় মায়ের হাত ছাড়িয়ে সে রোদের মধ্যে বসে পড়ে আলপনা আঁকা সড়কে। পাশে রঙ–তুলি নিয়ে আঁকছিল কয়েকজন শিল্পী। সে চিৎকার করে বলে, 'মা, দেখো কী সুন্দর করে রঙ করছে ওরা!'

কটিয়াদী থেকে কলেজছাত্র আরিফুল ইসলাম বন্ধুদের নিয়ে আলপনা দেখতে এসেছে। দীর্ঘ আলপনা দেখে তারা উচ্ছ্বসিত। আরিফ বলেন, ‘হাওরের সবুজের মাঝে বর্ণিল এবং দীর্ঘ আলপনায় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এটি স্বচক্ষে না দেখলে বর্ণনা করা কঠিন।’

আয়োজকরা জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক পুরো আয়োজনে সহযোগিতা করছেন।

মিঠামইনের অলওয়েদার সড়কে 'আলপনায় বৈশাখ ১৪৩১' অনুষ্ঠানে তিনি ছাড়াও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখসহ গণ্যমান্য লোকজন উপস্থিত থাকবেন।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ