যে কারণে নিজেদের উদ্যোগে মসজিদ বানাল হিজড়ারা

মসজিদ
  © ফাইল ছবি

নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যেতে চাইলেও প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না হিজড়া জনগোষ্ঠীকে। এই বৈষম্যের কারণে এবার নিজেরাই মসজিদ বানাল তারা। বার্তা সংস্থা এএফপির বরাতে সংবাদমাধ্যম জাকার্তা পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, ময়মনসিংহে সম্প্রতি বানানো হয়েছে এই মসজিদ।

এক কক্ষের মসজিদটির দেয়াল ও চাল টিনের। সামনে ছোট্ট বারান্দা। ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে সরকারি জমিতে বানানো এই মসজিদের নাম দক্ষিণ চর কালিবাড়ি মসজিদ।

সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে সবসময় বঞ্চিত হয়ে আসছে হিজড়া জনগোষ্ঠী। ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানেও তাদেরকে অংশ নিতে দেওয়া হয় না খুব একটা। সরকারের দান করা জমিতে বানানো এই মসজিদে নামাজ পড়ার মাধ্যমে সেসব আক্ষেপ কিছুটা হলেও ঘুচবে বলে মনে করছেন এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা। 

হিজড়া জনগোষ্ঠীর নেতা জ্যোতিকা তনু বলেন, ‘এখন থেকে কেউ আর হিজড়াদের এই মসজিদে নামাজ পড়তে বাধা দিতে পারবে না। কেউ আর আমাদের নিয়ে উপহাসও করতে পারবে না।’ 

শিশুকালে পবিত্র কোরআন পড়তে ভালোবাসতেন সোনিয়া নামের এই জনগোষ্ঠীর এক সদস্য। এমনকি মক্তবে যেতেও ভালো লাগত তাঁর। তারপর দীর্ঘ বিরতি। ইচ্ছা থাকলেও মসজিদে যাওয়া সম্ভব ছিল না। ৪২ বছর বয়সী সোনিয়া বলেন, ‘জীবনে আবার মসজিদে নামাজ পড়তে পারব, কখনো ভাবিনি।’

২০১৩ সালে হিজড়াদের সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে এরা রাজনীতিতেও অংশ নেন। এরই মধ্যে একজন মেয়রও হয়েছেন। সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিভিন্ন আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন কয়েকজন। কিন্তু এতদিন মসজিদে ব্রাত্যই থেকে গেছেন হিজড়ারা।

হিজড়া চ্যারিটির প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আবদুর রহমান আজাদ বলেন, এর মধ্য দিয়ে এই প্রথম দেশে হিজড়াদের জন্য বানানো হলো মসজিদ। আরেকটি শহরে এমন মসজিদ বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

জানা যায়, চলতি মাসে চালু হওয়া ময়মনসিংহের এই মসজিদ বানাতে অর্থ ও শ্রম দিয়েছেন হিজড়ারা। এতে একটি কবরস্থানও রয়েছে। গত বছর স্থানীয় কবরস্থানে এক হিজড়াকে শায়িত করতে দেয়নি গ্রামবাসী। এরপর এখানে বানানো হয় আলাদা কবরস্থান। 

দক্ষিণ চর কালিবাড়ি মসজিদের ইমাম আবদুল মোতালেব বলেন, ‘তারাও আল্লাহর সৃষ্টি করা অন্যান্য বান্দার মতোই। তাদেরকে বঞ্চিত করা ঠিক না। আমরা সবাই মানুষ। হয়তো কেউ নারী, কেউবা পুরুষ। আল্লাহ সবার জন্যই পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন। এ কারণে সবাইকে নামাজ পড়তে দেওয়া উচিত।’

হিজড়াদের সঙ্গে স্থানীয়রাও এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসছেন। নামাজ পড়তে আসা তেমনই একজন হলেন তোফাজ্জল হোসেন (৫৩)। তিনি বলেন, এখানে এসে নামাজ পড়ার পর (হিজড়াদের বিষয়ে) ভ্রান্ত ধারণাগুলো দূর হয়ে গেছে।


মন্তব্য