বিয়েতে বোবা ব্যক্তি যেভাবে কবুল বলেন

বিশেষ প্রতিবেদন
  © ফাইল ফটো

ইসলামের এক বিশেষ বিধান বিয়ে। বিয়ে আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত এবং নবি (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। সব মানুষের জীবনে বিয়ে জরুরি। মানুষ একা একা থাকতে পারে না। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ নিজের জীবন সঙ্গিনী খুঁজে পায়। প্রশান্তির ছায়া লাভ করে। পবিত্র কোরআনের সুরা নিসা অবতীর্ণ হয়েছে বিয়ে সংক্রান্ত বিধান বিষয়ে।

বোবা কিংবা বধির, অন্ধ কিংবা খোঁড়া—কারো জন্যই বিয়ে নিষিদ্ধ নয়। বরং চরিত্র সমুন্নত রাখতে এবং আদর্শ পরিবার গঠন ও মানবিক প্রশান্তি লাভের জন্য বিয়ে প্রধান ভূমিকা পালন করে। কোরআন-হাদিসে বিয়ের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিতদের বিয়ে করিয়ে দাও এবং তোমাদের সৎ ক্রীতদাস ও ক্রীতদাসীদেরও। যদি তারা দরিদ্র হয় তবে আল্লাহ তার নিজ অনুগ্রহে ধনী বানিয়ে দেবেন’ (সুরা নুর: ৩২)। রাসুলুল্লাহ (স.) বিয়ের প্রতি উৎসাহ ও তাকিদ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘চারটি জিনিস নবীদের চিরাচরিত সুন্নত। ১. লজ্জা-শরম, ২. সুগন্ধি ব্যবহার করা, ৩. মেসওয়াক করা এবং ৪. বিয়ে করা।’ (সুনানে তিরমিজি: ১০১৮)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যখন বান্দা বিয়ে করে, তখন সে তার দীনের অর্ধেক পূরণ করে। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ (সহিহ আল-জামিউস সাগির ওয়া জিয়াদাতুহু: ৬১৪৮; তাবারানি: ৯৭২; মুসতাদরাক হাকিম: ২৭২৮)

বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য ইজাব-কবুলের বাক্যগুলো সাক্ষীদের সামনে মৌখিকভাবে বলা আবশ্যক। তাই শুধু কাবিননামায় স্বাক্ষরের দ্বারা বিয়ে সম্পন্ন হয় না। (রদ্দুল মুহতার: ৩/১২, ফতোয়ায়ে হক্কানিয়া: ৪/৩১৫)

তবে, বাকশক্তিহীন বা বোবা ব্যক্তি যদি লিখতে-পড়তে পারেন তাহলে তাকে বিয়ের প্রস্তাব ও কবুল লিখিতভাবে করতে হবে। আর যদি তিনি লিখতে না পারেন তাহলে তিনি ইশারা করে সম্মতি প্রকাশ করলেও বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যাবে। (কিতাবুল আসাল: ৪/৫১৬; শরহু মুখতাসারিত তাহাবি: ৩/১১৩; আলমাবসুত, সারাখসি: ৬/১৪৩; ফাতহুল কাদির: ৩/৩৪৮; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২৭০; রদ্দুল মুহতার: ৩/২৪১)

হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন অবশ্যই বিয়ে করে। কেননা তা দৃষ্টিকে অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে সুরক্ষিত রাখে। আর যে ব্যক্তি সামর্থ্য না রাখে, সে যেন রোজা রাখে। কেননা রোজা প্রবৃত্তিকে দমন করে।(বুখারি ও মুসলিম শরিফ)

হজরত আনাস (রা.) বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বিবাহ করল সে তার অর্ধেক ইমান পূর্ণ করে নিলো। এখন সে যেন বাকি অর্ধেকের জন্য তাকওয়া ও আল্লাহভীতি অবলম্বন করে।(বায়হাকি শরিফ)

রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘বিয়ে আমার সুন্নত, যে আমার সুন্নত অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়। তোমরা বিয়ে করো। কেননা আমি উম্মতের সংখ্যা নিয়ে হাশরের মাঠে গর্ব করব।’ (ইবনে মাজাহ: ১৮৪৬)

উল্লেখ্য, বিয়েতে ধার্য করা মোহর প্রত্যেকের ক্ষেত্রে পরিশোধ করা জরুরি। মোহর আদায়ের নিয়তবিহীন বিয়েকে হাদিসে ব্যভিচারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। (আল মুজামুল আওসাত: ১৮৫১)। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী মোহর ধার্য করা এবং তা যথাসম্ভব দ্রুত পরিশোধ করা শরিয়তের নির্দেশ।

তথ্য: আরটিভি


মন্তব্য